সহজ কিস্তিতে লোন নেওয়ার নিয়ম

সহজ কিস্তিতে লোন বলতে কি বুঝায় অনেকে সেটা বুঝে না। অনেকের ধারণা লোন বলতে শুধু Car Loan, Home Loan, Business Loan, Student Loan, Auto Loan ইত্যাদি। এছাড়াও, অনেকেই মনে করে লোন মানে কয়েকদিন সময় লাগবে, দুই জন বা তারও বেশি জামিনদার লাগবে, অনেক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে ইত্যাদি।

কিন্তু এই দিন শেষ, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশে ও সহজ লোন সিস্টেম চালু রয়েছে। অর্থাৎ, কোন প্রকার জামিনদার লাগবে না, কোন প্রকার কাগজপত্র লাগবে না বা লাগলে ও কম, Instant Loan নেওয়া যাবে, ব্যাংকে গিয়ে লোন নেওয়ার প্রয়োজন নেই অর্থাৎ অনলাইনে লোন পাওয়া যায়।

তবে, সহজ লোন গুলোর ক্ষেত্রে কিছু লিমিট দেওয়া থাকে। যেমন, ২-৫ লাখের বেশি টাকা লোন পাওয়া যায় না। এটি কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করে। কিছু প্রতিষ্ঠান ৫০ হাজার টাকার বেশি লোন দেই না। এছাড়া, লোন দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করার প্রয়োজন হয়।

যারা পার্সোনাল লোন বা ব্যক্তিগত লোন, জরুরি লোন নিতে চাই তাদের বাংলাদেশের কিছু ব্যাংক, প্রতিষ্ঠান, অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিং গুলো খুব সহজ শর্তে লোন প্রদান করে। যার মাধ্যমে ব্যক্তিগত চাহিদা মেটানো সম্ভব এবং হঠাৎ বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাহলে চলুন সহজ কিস্তিতে লোন নেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

সহজ কিস্তিতে লোন নেওয়ার নিয়ম ২০২৪

সহজ কিস্তিতে লোন নেওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো পার্সোনাল লোন। সিটি ব্যাংক, এবি ব্যাংক, আশা ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক ইত্যাদি পার্সোনাল লোন প্রদান করে। এই সকল ব্যাংক ১ লাখ টাকা থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত লোন দিয়ে থাকে। অন্যদিকে, বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে সিটি ব্যাংক থেকে সবচেয়ে সহজ কিস্তিতে লোন নেওয়া যায়। বিকাশের মাধ্যমে লোন নেওয়ার জন্য কোন প্রকার কাগজপত্র, ব্যাংক একাউন্ট এবং জামিনদার লাগে না। আবেদন করার সাথে সাথে এই লোন পাওয়া যায়। সিটি ব্যাংক বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ২০,০০০ টাকা লোন দিয়ে থাকে।

যদি আপনার ২০ হাজার টাকার বেশি প্রয়োজন হয় তাহলে আপনার জন্য রয়েছে পার্সোনাল লোন। ব্যক্তিগত বা পারিবারিক প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানো এই ঋণের উদ্দেশ্য। সেক্ষেত্রে, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান ১ লাখ টাকা থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত লোন দেই। তবে আপনার লোনের পরিমাণ যত বেশি হবে তত লোন পাওয়া আপনার জন্য কষ্ট হবে।

আপনি যদি ২-৩ লাখ টাকার বেশি লোন নিতে চান তাহলে আপনার অনেক কাগজপত্র প্রয়োজন হবে। পরিবার ব্যতীত আত্মীয় স্বজনের মধ্যে থেকে একের অধিক জামিনদার লাগবে। এছাড়া, আপনার ইনকাম সোর্স অনেক বেশি ভালো হতে হবে।

পার্সোনাল লোনের পর আরেকটি সহজ কিস্তিতে লোন নেওয়ার মাধ্যম হলো জরুরি লোন। জরুরি লোন বলতে বুঝায় এটি একটি ছোট মেয়াদী লোন এবং খুব দ্রুত লোন প্রদান করা হয়। জরুরী লোনের ক্ষেত্রে তেমন জামিনদার ও কাগজপত্রের প্রয়োজন লাগে না। বেশিরভাগ জরুরি লোন মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠান গুলো প্রদান করে। গ্রামীণ ব্যাংক, আশা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এগুলো সফল মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠান। তবে মোবাইল ব্যাংকিং এর মধ্যে রয়েছে বিকাশ। বিকাশ মুহূর্তের মধ্যে ২০ হাজার পর্যন্ত লোন প্রদান করে। এই লোন মূলত সিটি ব্যাংক বিকাশের মাধ্যমে দিয়ে থাকে।

আরো পড়ুন: প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম

পার্সোনাল লোন কি?

পার্সোনাল লোন বা ব্যক্তিগত লোন হলো এমন এক ধরনের লোন যার মাধ্যমে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক যে কোন প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানো সম্ভব। আরো বিস্তারিতভাবে বললে, খুব জরুরী প্রয়োজনে কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সরাসরি অথবা চেক ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে যে লোন নেওয়া হয় সেটি হলো পার্সোনাল ঋণ (Personal Loan)। এই লোনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত চাহিদা অথবা পারিবারিক চাহিদা মেটানো সম্ভব। ঋণের পরিমাণের উপর নির্ভর করে পার্সোনাল লোন নেওয়ার সময় খুব বেশি কাগজপত্র এবং জামানত গ্রহণের প্রয়োজন হয় না।

পার্সোনাল লোনের ধরন

পার্সোনাল লোনের ধরন বলতে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানো। যেমন:

  • ট্রাভেল লোন।
  • চিকিৎসা লোন।
  • এডুকেশন লোন।
  • ম্যারেজ লোন।
  • পণ্য ক্রয়।
  • ক্রেডিট কার্ডের ঋণ।
  • বাড়ি মেরামত।
  • ইত্যাদি।

পার্সোনাল লোন নেওয়ার উপায়

বাংলাদেশের প্রায় সকল ধরনের ব্যাংক পার্সোনাল লোন প্রদান করে। এর মধ্যে AB Bank, Lanka Bangla Bank, UCB Bank, Pubali Bank, Brac Bank, City Bank, One Bank ইত্যাদি অন্যতম। এই সকল ব্যাংক থেকে ৮% থেকে ১৬% হারে ৫০ হাজার টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকা বা তারও বেশি টাকা লোন নেওয়া যাবে। ঋণের পরিমাণের উপর নির্ভর করে দুইজন জামিনদারের প্রয়োজন হবে। এই লোনের মেয়াদ সাধারণত ৬ মাস থেকে ৬০ মাস পর্যন্ত হয়ে থাকে, যা প্রতিষ্ঠান ও লোনের উপর নির্ভর করবে।

পার্সোনাল লোন নেওয়ার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা

পার্সোনাল নেওয়ার নেওয়ার জন্য যে সকল প্রয়োজনীয় যোগ্যতা লাগবে সেগুলো হলো:

  • আবেদনকারীর সর্বনিম্ন মাসিক আয় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা হতে হবে।
  • আবেদনকারীর বয়স ২১ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
  • আবেদনকারীর বাংলাদেশের যে কোন ব্যাংক একাউন্টে ১ বছরে ব্যাংক একাউন্টের লেনদেন দেখাতে হবে।
  • আবেদনকারী যদি চাকরিজীবী হয়ে থাকে তাহলে ১ বছরের পেশাদার বা কাজের অভিজ্ঞতা। এছাড়া, ৩ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী।

পার্সোনাল লোন নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

পার্সোনাল লোন নেওয়ার জন্য যে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে সেগুলো হলো:

  • জাতীয় পরিচয় পত্র (NID Card)।
  • ১ বছরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
  • আবেদনকারীর এবং গ্যারান্টর এর সদ্য তোলা ২ থেকে ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • আবেদনকারীর এবং গ্যারান্টর এর পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স (যদি থাকে)।
  • চাকরিজীবী হলে আবেদনকারীর শেষ তিন থেকে ১২ মাসের বেতন না স্যালারি স্লিপ বা ব্যাংকিং লেনদেন এবং চাকরিজীবীদের আইডি করে দেখাতে হবে।
  • স্বাক্ষরিত আবেদনপত্র যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে।
  • বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস বিলের ফটোকপি (যদি প্রযোজ্য হয়)।
  • ই-টিন কপি প্রয়োজন হতে পারে।
  • ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত আয় এবং অন্যন্য হিসাব দেখতে হবে।
  • আবেদনকারী যদি ব্যবসায়ী হন তাহলে ট্রেড লাইসেন্স হালনাগাদ থাকতে হবে।
  • আবেদনকারী যদি বাড়ির মালিক হয়ে থাকে এবং বাড়ি ভাড়া থেকে যদি ইনকাম হয়ে থাকে তাহলে বাড়ির দলিলপত্র এবং ভাড়াটিয়া থাকলে ভাড়ার রশিদ দেখাতে হবে।

// নোট: এমনও হতে পারে উপরের উল্লেখিত সকল কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে না। আবার এমনও হতে পারে উপরের উল্লেখিত কাগজপত্র ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্র প্রয়োজন হবে। এটা সম্পূর্ণ ব্যাংকের উপর নির্ভর করে।

পার্সোনাল লোনের সময়সীমা ও সুদের হার

  • সাধারণত, পার্সোনাল লোনের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া যায়। তবে কিছু ব্যাংক কোটি টাকা পর্যন্ত লোন দেই।
  • সর্বোচ্চ মেয়াদ ১২ মাস থেকে ৬০ মাস অর্থাৎ ১ বছর থেকে ৫ বছর।
  • পার্সোনাল লোনের সুদের হার ৮% থেকে ১৬% পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে প্রায় ব্যাংকে ঋণের সুদের হার ৯% হয়ে থাকে।
  • টপ-আপ লোন সুবিধা।

জরুরি লোন কি?

জরুরী লোন হলো এমন এক ধরনের লোন যা খুব দ্রুত অনুমোদন করা হয় এবং এটি ছোট মেয়াদী ঋণ হয়ে থাকে। জরুরী লোন খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে পাওয়া যায় এবং বেশিরভাগ সময় কোন জামিনদারের প্রয়োজন হয় না। এছাড়া, জরুরি লোন নেওয়ার সময় খুব বেশি কাগজপত্রের ও প্রয়োজন হয় না। যে কেউ চাইলে এই লোন নিতে পারে তবে শর্তসাপেক্ষে।

জরুরী লোনের ধরন

  • পার্সোনাল লোন।
  • চিকিৎসা ক্ষেত্রে।
  • শিক্ষা ক্ষেত্রে।
  • ছোট ব্যবসা লোন।
  • ব্যক্তিগত আর্থিক সংকট।
  • ব্যক্তিগত ও পারিবারিক চাহিদা মেটানো।
  • গাড়ি মেরামত।
  • বাড়ি মেরামত।
  • আসবাবপত্র, ইলেকট্রিক ইত্যাদি পণ্য খরচ।

বাংলাদেশের অনেক ব্যাংক জরুরী লোন প্রদান লোন করে। যেমন; ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক এবং বাংলাদেশের অন্যতম মোবাইল ব্যাংকিং সেবা Bkash জরুরী লোন প্রদান করে। তবে এগুলো ছাড়াও বেশিরভাগ ব্যাংক জরুরী লোন প্রদান করে।

আরো পড়ুন:

জরুরী লোনের জন্য আবেদন করার নিয়ম

বাংলাদেশের অনেক জনপ্রিয় ব্যাংক জরুরী লোন প্রদান করে যেমন; ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ইত্যাদি। আপনার নিকটস্থ এই সকল ব্যাংকে গিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট, ইনকাম সোর্স, সম্পত্তির প্রমাণ (যদি থাকে) ইত্যাদি কাগজপত্র জমা দিতে ব্যক্তিগত ভাবে জরুরী লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে এর আগে জরুরী লোন নেওয়ার যোগ্যতা, ঋণের পরিমাণ, সুদের হার ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত।

জরুরী লোনের জন্য আবেদন করার আগে যা যা জানতে হবে

  • আপনি কত টাকা ঋণ নিতে চান আগে নির্ধারণ করুন।
  • মাসিক কিস্তিতে অথবা সাপ্তাহিক কিস্তিতে আপনার ঋণ পরিশোধ করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
  • বিভিন্ন ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের সুদের হার ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যে সকল ব্যাংক লাভজনক সে সকল ব্যাংক নির্বাচন করুন।
  • ব্যাংক থেকে দেওয়া শর্তাবলী গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করবেন।
  • কিছু কিছু ক্ষেত্রে জামানত প্রয়োজন হতে পারে, যা ঋণের পরিমাণ ও প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করে।

জরুরী লোন নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • জাতীয় পরিচয় পত্র (NID Card)।
  • পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, সম্পত্তির কাগজপত্র (যদি থাকে)।
  • আবেদনকারীর ও গ্যারান্টারের সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি। কমপক্ষে দুই কপি।
  • আবেদনকারীর ব্যাংক স্টেটমেন্ট। বিগত ১ বছরের।
  • আবেদনকারীর ইনকাম সোর্স। অবশ্যই ঋণ পরিশোধ করার মতো ক্ষমতা থাকতে হবে।
  • চাকরির ক্ষেত্রে ১ বছরের অভিজ্ঞতা ও ব্যবসার ক্ষেত্রে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা লাগবে।

জরুরী লোনের সময়সীমা, সুদের হার ও শর্ত সমুহ

  • জরুরী লোনের ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকা বা তারও বেশি লোন পাওয়া যায়।
  • জরুরী লোনের সময়সীমা ১ বছর থেকে ৫ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। ঋণের পরিমাণের উপর এটি নির্ভর করে।
  • বয়স ২১ থেকে ৬৫ বছর।
  • সঠিক সময়ের মধ্যে লোন পরিশোধ করা না হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অনেক সময় স্টুডেন্টরাও জরুরী লোন নিতে পারে সেটি প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করে। স্টুডেন্ট এর ক্ষেত্রে শর্তসমূহ, লোনের পরিমাণ, বয়স, ইনকাম সোর্স কেমন হবে সেটা সঠিক ভাবে বলা সম্ভব না তাই, নিকটস্থ ব্যাংকে যোগাযোগ করতে হবে।

মোবাইল ব্যাংকিং লোন

মোবাইল ব্যাংকিং বা অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে টাকা লেনদেন সম্পর্কে অনেকেই পরিচিত। এরপরে ও, অনেকে জানে না কিভাবে অনলাইনে লোন পাওয়া যায়। বর্তমানে, ঘরে বসে মুহূর্তের মধ্যে চাইলে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপের মাধ্যমে ৫০০ টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লোন নেওয়া যায়। বিশেষ করে সবার পরিচিত বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত লোন গ্রহণ করতে পারবেন। নিচে বিকাশ থেকে কিভাবে লোন নেওয়া যায় বা বিকাশে লোন নেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

বিকাশ লোন কি?

বিকাশ লোন হলো এক ধরনের মোবাইল ব্যাংকিং লোন। যার মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে কোন প্রকার কাগজপত্র ও জামিনদার ছাড়াই সিটি ব্যাংক থেকে বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে ৫০০ টাকা ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত লোন গ্রহন করতে পারবেন। এর জন্য কোন ব্যাংক একাউন্ট এর প্রয়োজন নেই।

বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে গ্রাহক লোনের জন্য আবেদন করবে এবং সেই টাকা বিকাশ একাউন্টের ব্যালেন্স এ যোগ হয়ে যাবে। গ্রাহক এই টাকা স্বাভাবিক ভাবে উত্তোলন করতে পারবে। তবে বলে রাখা ভালো একজন গ্রাহক শুধুমাত্র একবার এ একটি লোন নিতে পারবেন।

বিকাশ লোনের ধরন

  • ব্যক্তিগত চাহিদা মেটানো: আপনি চাইলে আপনার ব্যক্তিগত যে কোন কাজে এই লোন নিতে পারবেন।
  • শিক্ষা ঋণ: আপনার পড়াশুনার খরচের জন্য এই লোন নেওয়া যাবে।
  • উদ্যোক্তা ঋণ: ছোট খাটো ব্যবসা করার জন্য বা ব্যবসার ক্ষেত্রে আর্থিক সংকট দেখা দিলে এই লোন নেওয়া যাবে।
  • কৃষি কাজের জন্য।

// নোট: যে কোন কাজের জন্য এই লোন পাওয়া যাবে। জিজ্ঞেস করার কেউ নেই যে কেন বিকাশ থেকে লোন নিবেন। তবে সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ করা না হলে অতিরিক্ত টাকা কেটে নেওয়া হবে।

বিকাশ লোন নেওয়ার যোগ্যতা

  • একজন নিয়মিত বিকাশ গ্রাহক হতে হবে। এক কথায় প্রতিদিন বা নিয়মিত লেনদেন করতে হবে।
  • একটি বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খুলতে হবে।
  • যেকোন বয়সের ব্যক্তি এই লোন নিতে পারবে। অর্থাৎ একজন স্টুডেন্ট যদি তার বাবা মায়ের আইডি কার্ড দিয়ে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলে এবং নিয়মিত লেনদেন করে তাহলে সে এই লোন নিতে পারবে। তবে, ১৮ বছরের নিচে ব্যক্তিদের এই লোন না নেওয়া উত্তম।

বিকাশ লোনের মেয়াদ, সুদের হার ও শর্ত সমুহ

  • বিকাশ লোন পরিশোধ করার মেয়াদ ৩ মাস।
  • বিকাশ লোন নেওয়ার জন্য কোন কাগজপত্র লাগবে না।
  • বিকাশ লোন নেওয়ার জন্য জামিনদার লাগবে না।
  • কোন ধরনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন নেই।
  • মুহূর্তের মধ্যে লোন পাওয়া যাবে।
  • একাউন্ট ব্যালেন্স থেকেই অটো-কিস্তি পরিশোধের সুবিধা রয়েছে।
  • ব্যাংক প্রসেসিং ফি ০.৫৭৫% (০.৫% + ভ্যাট) (এটা লোনের উপর নির্ভর করে)।
  • ঋণের পরিমাণের উপর নির্ভর করে বাৎসরিক ৯% ইন্টারেস্ট রেট প্রযোজ্য হবে।

যে সকল ব্যবহারকারী এই লোন সুবিধা পাবেন

এক কথায় যারা নিয়মিত লেনদেন করে থাকে শুধুমাত্র তারাই বিকাশ থেকে লোন পাবেন। বিকাশ লোন পেতে বিকাশ একাউন্টে সবসময় টাকা রাখতে হবে এবং পেমেন্ট ও অ্যাড মানি সেবা বেশি বেশি ব্যবহার করতে হবে। আপনি যদি এই দুটি শর্ত মেনে চলেন তাহলে আপনি লোন পাবেন কিনা সেটা জানার জন্য প্রথমে বিকাশ অ্যাকাউন্ট এ প্রবেশ করুন। এরপর, হোম পেজ থেকে লোন অপশনে যান। মূলত সিটি ব্যাংক নির্দিষ্ট কিছু বিকাশ গ্রাহকদের এই সেবা প্রদান করেন। তাই সবাই চাইলে এই সেবা পাবেন না।

বিকাশ লোন পরিশোধের নিয়মাবলি

বিকাশের গ্রাহক লোন পাওয়ার পর ড্যাশবোর্ড-এ লোনের পরিমাণ এবং পরিশোধের তারিখ দেখতে পাবেন। গ্রাহক চাইলে লোন পরিশোধ করার নির্দিষ্ট দিনের আগে নিজে লোন পরিশোধ করে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে সুদের হার বা ইন্টারেস্টের খরচ কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, গ্রাহকের বিকাশ একাউন্টে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা থাকে তাহলে লোন পরিশোধ করার নির্দিষ্ট তারিখে একাউন্ট থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ অটো ডেবিট হিসেবে কেটে নেয়া হবে।

বিকাশ লোন ঝুঁকি

বিকাশ লোনের ক্ষেত্রে সবচাইতে বেশি সুবিধা থাকলেও অন্যান্য লোনের মতো বিকাশ লোনে ও কিছু ঝুঁকি জড়িত। অর্থাৎ, গ্রাহক যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লোন পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে অতিরিক্ত সুদ বা টাকা পরিশোধ করতে হবে।

ই ঋণ (e-Rin) কি?

ই ঋণ হলো এক ধরনের অনলাইন মোবাইল লোন যার মাধ্যমে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে লোন পাওয়া যায়। মূলত, Dhakabankltd এই লোন দিয়ে থাকে। এটি এক ধরনের পার্সোনাল লোন। ব্যক্তিগত চাহিদা মেটানোর জন্য ঢাকা ব্যাংক ১,০০০ টাকা থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত লোন দেয়। কোন প্রকার কাগজপত্র ও ঝামেলা ছাড়াই সর্বোচ্চ ৬ মাস মেয়াদি এই লোন নেওয়া যায়।

ই ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা

  • ২১ বছরের বেশি বয়সী যে কেউ এই লোন নিতে পারবে।
  • আবেদনকারীর মাসিক সর্বনিম্ন ইনকাম ১০ হাজার টাকা হতে হবে।
  • আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র, গুগল ও ফেসবুক একাউন্ট থাকতে হবে।
  • ই ঋণ অ্যাপ ব্যবহার করার নিয়ম কানুন জানতে হবে।

e-Rin অ্যাপের মাধ্যমে লোন নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • একটি ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে এবং ব্যাংক একাউন্টের সর্বশেষ তথ্য।
  • একটি বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র।
  • বেতনের স্লিপ।
  • পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ বিলের কপি (যেকোনো একটি)।

অনলাইনে লোন পাওয়ার উপায়

বাংলাদেশে প্রায় ১৩ টি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে আর্থিক সেবা দিচ্ছে। তার মধ্যে দেশের জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ ও উপায়সহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে এই সকল প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকরা এই লোন নিতে পারবে। এই ধরনের লোন কে “ডিজিটাল ক্ষুদ্র ঋণ” বলা হয়।

অন্যদিকে ব্যাংক এশিয়া তার গ্রাহকদের প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লোন দিচ্ছে। এই লোনের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৬ মাস। ব্যাংক এশিয়া থেকে অনলাইনে লোন নেওয়ার জন্য প্রথমে ব্যাংক এশিয়ার গ্রাহক হতে হবে। এরপর, ব্যাংক এশিয়ার মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে যে কেউ চাইলে ছয় মাস মেয়াদি এই ন্যানো লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

FAQ

কোন ব্যাংক থেকে পার্সোনাল লোন নেওয়া যাবে?

দেশের বেশিরভাগ ব্যাংক পার্সোনাল লোন দেই। যেমন; পূবালী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, এবি ব্যাংক, লংকা বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ইত্যাদি। এর মধ্যে যে সকল ব্যাংক খুব কম সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান করে সে সকল ব্যাংক থেকে আপনি পার্সোনাল লোন নিতে পারেন।

ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ কত টাকা লোন নেওয়া যায়?

ব্যবসার ধরন ও চাহিদার উপর নির্ভর করে ৫০ লক্ষ টাকা থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা লোন পাওয়া যায়।

ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদের হার কত?

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী ক্রেডিট কার্ড ছাড়া বাংলাদেশের সব ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদের হার ৯% শতাংশ। তবে এরপরও, কিছু কিছু ব্যাংক সর্বোচ্চ ১৬ % বা তারও বেশি সুদ নিতে থাকে। তবে বেশিরভাগ ব্যাংক ৯% বা তারও কম সুদ গ্রহন করে।

ব্র্যাক ব্যাংক কত টাকা লোন দেয়?

ব্র্যাক ব্যাংক পার্সোনাল লোন ২ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত লোন দেই। তবে ব্যবসার ধরনের উপর নির্ভর করে ৫০ লক্ষ টাকা থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত লোন দেই।

বিকাশ সর্বোচ্চ কত টাকা লোন দেয়?

একজন নিয়মিত বিকাশ গ্রাহক বিকাশ থেকে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত লোন নিতে পারবে। বিকাশ অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা থাকলে নির্দিষ্ট তারিখে অটোমেটিক লোনের কিস্তি পরিশোধ হয়ে যাবে।

এবি ব্যাংক কত টাকা লোন দেই?

এবি ব্যাংক ব্যক্তিগত বা পারিবারিক যে কোন কাজের চাহিদা মেটানোর জন্য সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত লোন দেই। এই লোনের আবেদন ফি ৫০০ টাকা। প্রসেসিং ফি ঋণের পরিমাণের উপর ১%। এই লোনের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৬০ মাস।

পার্সোনাল লোন পেতে কতদিন লাগে?

পার্সোনাল লোন পেতে সাধারণত ১ থেকে ৩ দিন সময় লাগে। বেশি হলে সর্বোচ্চ ৭ দিন সময় লাগবে।

সহজ কিস্তিতে লোন – শেষ কথা

আশা করি এতক্ষণ এ আপনি বুঝতে পেরেছেন কিভাবে সহজ কিস্তিতে লোন নিতে হয়। সহজ কিস্তিতে লোন বলতে বুঝায় যে সকল লোন নেওয়ার সময় কোন রকম ঝামেলা হয় না, খুব বেশি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রয়োজন হয় না এবং পরিবার ব্যতীত অন্য কারো জামিনদার প্রয়োজন হয় না। তবে বর্তমানে নিরাপত্তার জন্য প্রায় সকল ধরনের লোন নেওয়ার সময় কিছু কাগজপত্র ও শর্তের প্রয়োজন হয় যা স্বাভাবিক একটি বিষয়।

আপনার যদি তাৎক্ষণিক টাকার প্রয়োজন হয় তাহলে আপনি বিকাশ লোন নিতে পারেন। তবে এই লোন সবাই চাইলে নিতে পারে না। এর জন্য একজন নিয়মিত বিকাশ ব্যবহারকারী হতে হবে। যাইহোক, লোন সম্পর্কিত আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদের মেসেঞ্জারের মাধ্যমে জানাতে পারেন।

Leave a Comment