কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা

বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছাত্রীদের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাংলাদেশে শুধুমাত্র বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছাত্রীরা কম্পিউটার সাইন্স সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশুনার করার সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছাত্রীদের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ করে দেয়। তবে বর্তমানে কিছু আইটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা CSE এর সম্পূর্ণ কোর্স করিয়ে থাকে।

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বা কম্পিউটার সাইন্স সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশুনা করা সবার ইচ্ছা থাকে। কারণ, পুরো বিশ্বে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা অনেক বেশি। বর্তমানে এর চাহিদা আকাশচুম্বী এবং ভবিষ্যতে এর চাহিদা খুব বেশি হারে বৃদ্ধি পাবে। তাই, সিএসই এর মতো সাবজেক্ট নিয়ে সবাই পড়াশুনা করতে চাই। তবে এই সেক্টরে দিন দিন প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সিএসই তে সম্পূর্ণ টেকনিক্যাল পড়াশুনা হয়ে থাকে। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বা সিএসই সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশুনা করার জন্য অনেক বেশি প্রবলেম সলভার হতে হয়। এই সেক্টরে প্রবলেম সলভ করতে হয় প্রোগ্রামিং বা কোডিং এর মাধ্যমে। আর প্রবলেম সলভ তারাই করতে পারে যারা গণিতে অনেক বেশি ভালো। যাদের গণিত এর মতো সাবজেক্টে ভয় লাগে তারা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে না।

কম্পিউটার সায়েন্স এ পড়ে সবাই প্রোগ্রামার বা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হবেন বিষয়টি তেমন না। প্রোগ্রামিং ছাড়া ও সিএসই বা কম্পিউটার সায়েন্স এ পড়াশুনা করে ডিজাইনার, মার্কেটার, প্রজেক্ট ম্যানেজার, প্রোডাক্ট ম্যানেজার, জুনিয়র ওয়েব ডেভেলপার, জুনিয়র অ্যাপ ডেভেলপার হিসেবে সফটওয়্যার কোম্পানি গুলোতে চাকরি করা যায়। তবে এর মার্কেট অনেক প্রতিযোগিতামূলক।

এখন জেনে নেওয়া যাক কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা বা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা সম্পর্কে।

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা

১. পড়াশোনা যোগ্যতা: উচ্চ মাধ্যমিক (HSC) ও সমমানের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করতে হবে। অবশ্যই, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উচ্চতর গণিত, রসায়ন, পদার্থ বিজ্ঞান সহ উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো পাস করতে হবে।

  • বাংলাদেশে বেশ কিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেমন; Buet, Du, Cuet, Cu, Ruet, ইত্যাদি। এছাড়াও আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে এই সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE) নিয়ে পড়ার জন্য অবশ্যই একজন বিজ্ঞান বিভাগের স্টুডেন্ট হতে হবে এবং SSC ও HSC তে ৪.০০ – ৪.৫০ সহ সর্বমোট ৯.০০ বা ৯.৫০ থাকতে হবে। তবে দুটিতে GPA 5 থাকা উত্তম। যাইহোক, এই পয়েন্ট অর্জন করার পর আপনি এই সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবেন এবং সে সকল পরীক্ষায় পাশ করতে হবে তারপর আপনি CSE নিয়ে পড়ার জন্য যোগ্য হবেন। নোট: সরকারি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য পয়েন্ট কত লাগবে সেটা আপনি আপনার পরিচিত বা বন্ধুদের থেকে জেনে নিবেন।
  • এখন আপনি যদি এই সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারেন তাহলে আপনার জন্য আরেকটি সুযোগ রয়েছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার। বিশেষ করে CSE নিয়ে পড়ার জন্য আপনি আরেকটি সুযোগ পাবেন। সেটি হলো গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়। গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় ২৪ টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, এই সব গুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যে থেকে আপনি যেকোন একটিতে পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি হতে পারেন। গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আপনার SSC ও HSC তে ৩.৫০ সহ কমপক্ষে ৭.০০ থাকতে হবে (চতুর্থ বিষয় সহ)। এই পয়েন্ট থাকলে আপনি ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন। এই ভর্তি পরীক্ষায় আপনি যদি সর্বনিম্ন ৪০ পাশ মার্ক তুলতে পারেন তাহলে মোটামুটি লেভেলের একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স (CSE) নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পাবেন।
  • যদি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারেন তাহলে আপনার আরেকটি সুযোগ রয়েছে সেটি হলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। আপনার টাকা থাকলে আপনি খুব সহজে বাংলাদেশের প্রায় ১১৩ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যে যেকোন একটিতে পড়তে পারেন। তবে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাইলে সেক্ষেত্রে আপনাকে SSC ও HSC তে ভালো পাশ করতে হবে। মোটামুটি প্রায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় SSC ও HSC তে ২.৫০ থেকে শুরু করে মোট ৫.০০ থাকলে ভর্তির সুযোগ দিয়ে থাকে।

২. গাণিতিক দক্ষতা: যার আগে থেকে গণিতের উপর ভালো দক্ষতা নেই তার জন্য কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনা করা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। একজন ভালো সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য গণিতের উপর ভালো দক্ষ হতে হবে। কারণ, কম্পিউটার সায়েন্সে অনেক বেশি প্রবলেম সলভ করতে হয় যেগুলো গণিত এবং প্রোগ্রামিং / কোডিং এর মাধ্যমে করা হয়। তাই একজন ভালো কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য গণিতের উপর ভালো দক্ষতা অর্জন করা আবশ্যক।

৩. পদার্থবিজ্ঞান এর দক্ষতা: একজন ভালো কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য পদার্থ বিজ্ঞানের সাধারণ বিষয় গুলো জানা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি মেশিন লার্নিং, হার্ডওয়্যার, মাইক্রোচিপস ইত্যাদি নিয়ে কাজ করেন সেক্ষেত্রে আপনার পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। কারণ এই সকল কাজ করার সময় ইলেকট্রনিক্স সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হয়।

৪. ভালো প্রোগ্রামার: কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মানেই একজন ভালো প্রোগ্রামার। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য একজন ভালো প্রোগ্রামার হওয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একজন ভালো প্রোগ্রামার প্রবলেম সলভ করতে পারে।

৫. দক্ষ প্রবলেম সলভার: কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এর দুনিয়ায় নিজেকে একজন ভালো সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার প্রমাণ করার জন্য দক্ষ প্রবলেম সলভার হওয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

৬. দ্রুত শেখার দক্ষতা: গুগলে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করার জন্য সবার প্রথম দ্রুত শেখার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। শুধু গুগল না বিশ্বের বড় বড় সফটওয়্যার কোম্পানি গুলো দ্রুত শেখার দক্ষ ব্যক্তিদের বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

৭. সমস্যা সমাধানের দক্ষতা: কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের সমস্যা সমাধান করার দক্ষতা থাকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বা কম্পিউটার সাইন্স মানেই সমস্যা। এখানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে যারা প্রোগ্রামিং নিয়ে কাজ করে তারা প্রতিদিন কোন না কোন সমস্যায় পড়ে। যেমন: একটি সফটওয়্যার সম্পূর্ন বানানোর পরেও কাজ শেষ হয়ে যায় না। এই সফটওয়্যার মধ্যে অনেক গুলো সমস্যা থাকতে পারে। তাই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা থাকা আবশ্যক। ধরুন আপনি সফটওয়্যার এর মধ্যে একটি কন্টাক্ট ফরম অ্যাড করলেন সেটি ঠিকমতো কাজ করছে না। এখন ঐ কন্টাক্ট কনফার্ম কেন কাজ করছে না সেটি সম্পর্কে আপনি গুগল, ইউটিউব ইত্যাদি থেকে সমাধান জেনে নিতে পারেন। যদি আপনি বড় ভাইদের থেকে এই সমাধান জেনে নিতে পারেন আরো ভালো। এভাবে অন্যের কাছ থেকে সমস্যার সমাধান জেনে নেওয়ার দক্ষতা থাকতে হবে। সমস্যায় পড়লে এটা নিয়ে বসে থাকলে হবে না।

৮. টিম ম্যানেজ করার দক্ষতা: আপনার থেকে মনে রাখতে হবে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়াররা একা কাজ করে না। ভার্সিটি থেকে শুরু করে প্রতিটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে টিম থাকে। একটা প্রজেক্ট তৈরি করার সময় ঐ প্রজেক্টে অনেক কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার কাজ করে। তাই টিমের মেম্বারের সাথে ভালো আচরণ করা, টিম ম্যানেজ করা, সমস্যা সমাধান নিয়ে কথা বলা, সাহায্য করার মতো দক্ষতা থাকতে হবে।

৯. ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা: কম্পিউটার সায়েন্সে বাংলা বলতে কিছু নেই, আপনাকে অবশ্যই ইংরেজিতে সব বিষয় পড়তে হবে। এছাড়াও, চাকরি ক্ষেত্রে অবশ্যই ইংরেজি জানতে হবে। কারণ, কম্পিউটার সায়েন্স এর চাকরি গুলোর ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার অনেক বেশি। যাইহোক, আপনি যদি একজন ভালো প্রোগ্রামার হতে চান তাহলে আপনাকে গণিতের পাশাপাশি ইংরেজিতে ও ভালো করতে হবে।

১ ০. প্রবলেম সলভার: এর কোন বিকল্প নেই। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রথমে যেকোন একটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ভালোভাবে শিখতে হয়, তারপর এই ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে বেশি বেশি প্রবলেম সলভ করতে হয়। বিশেষ করে যাদের স্বপ্ন বড় বড় কোম্পানি গুলোতে চাকরি করা। আপনার যদি গুগলের মতো কোম্পানিতে চাকরি করার ইচ্ছা থাকে তাহলে আপনাকে অবশ্যই প্রবলেম সলভার হতে হবে।

উপরের উল্লেখিত এই কয়েকটি দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকলে একজন ভালো কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সম্ভব। এই সকল দক্ষতা যার মধ্যে নেই সে একজন ভালো কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে না। তবে শুধুমাত্র কম্পিউটার সাইন্স এ মোটামুটি সিজিপিএ অর্জন করলে প্রোডাক্ট ম্যানেজার, ডিজাইনার, প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে চাকরি পাওয়া যায়। কিন্তু, একজন দক্ষ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য উপরের উল্লেখিত এই দক্ষতা থাকা আবশ্যক।

আরো পড়ুন: নগদ একাউন্ট দেখার নিয়ম

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার খরচ

বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ৪ বছর মেয়াদী কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য সর্বনিম্ন ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৮ লাখ টাকা বা তারও বেশি লাগতে পারে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৪ বছর মেয়াদী কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা খরচ হবে। তবে আপনার কত টাকা খরচ হবে সেটা নির্ভর করবে আপনি কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করবেন। যেমন; নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে সিএসই নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা বা তারও বেশি লাগতে পারে। অন্যদিকে, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটিতে সিএসই নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে।

আপনার যদি ৪ বছরের সর্বনিম্ন ৪ লাখ বা ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার মতো বাজেট থাকে তাহলে ও আপনি মোটামুটি লেভেলের একটা ভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন। যদি আপনার বাজেট ৫ লাখ টাকা থেকে ৮ লাখ টাকার মধ্যে থাকে তাহলে আপনি ঢাকার মধ্যে নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন। যেমন: নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সেরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম, যা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে হার মানাবে। তাই আপনি যদি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে সিএসই নিয়ে পড়াশোনা করতে না পারেন তাহলে হতাশ হবেন না। বেসরকারি অনেক ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আপনি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার কোর্স সম্পূর্ন করতে পারবেন।

আরো পড়ুন: সহজ কিস্তিতে লোন নেওয়ার নিয়ম

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভবিষ্যৎ

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভবিষ্যৎ নিঃসন্দেহে ভালো, এতে কোন সন্দেহ নেই। বর্তমানে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা অনেক বেশি ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। কিন্তু, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে দিন দিন প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিএসই স্টুডেন্ট এবং নন সিএসই সবাই এই সেক্টরে আসার চেষ্টা করে। তাই এই সেক্টরে টিকে থাকতে হলে প্রচুর কষ্ট করতে হবে এবং নিয়মিত শিখতে হবে। কম্পিউটার সাইন্স সবার জন্য না। ভবিষ্যত ভালো কিন্তু এই সেক্টরে সবার আসা ভালো হবে না। আমাদের সমাজে দেখা যায় একজন কম্পিউটার সায়েন্স পড়ে তাই আমিও পড়ব। এই বিষয়টি অনেক ভয়াবহ। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভবিষ্যৎ খারাপ তাদের জন্য যারা অন্যের থেকে দেখে এই সেক্টরে আসে।

বাংলাদেশে ৩০ টিরও বেশি বড় বড় সফটওয়্যার কোম্পানি আছে যেখানে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার কাজ করে। গবেষণা অনুযায়ী জানা যায়, আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে আরো কয়েক গুণ বেশি সফটওয়্যার কোম্পানি বৃদ্ধি পাবে। তবে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি সফটওয়্যার কোম্পানি রয়েছে যেখানে সাধারণত ১০-৫০ জন লোক কাজ করে। এরকম ছোট ছোট লোকাল কোম্পানিতে ও ভালো টাকা পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের ভবিষ্যৎ অনেক ভালো।

বাংলাদেশ সরকার অন্যান্য দেশের মতো এই সেক্টরে উন্নত করার চেষ্টা করছে। এছাড়া বিদেশে কম্পিউটার সাইন্স এর উচ্চ শিক্ষার অনেক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। কেউ যদি চায় তাহলে সে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে সেই দেশে একেবারের জন্য থেকে যেতে পারে অথবা ভালো ক্যারিয়ারের জন্য সেই দেশে কয়েক বছর বসবাস করতে পারে। তবে দুঃখের সাথে বলতে হয় ভবিষ্যতে দিন দিন প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। তাই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের সবসময় পড়াশোনা করতে হবে।

FAQ

কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE) কী?

কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এটি দুটি অংশে বিভক্ত। যেমন; Computer Science বলতে বুঝায় কম্পিউটার সফটওয়্যার এবং প্রোগ্রামিং নিয়ে কাজ করা এবং Computer Engineer বলতে বুঝায় কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার (যেমন প্রসেসর, মেমরি, এবং অন্যান্য অংশ) নিয়ে কাজ করা।

CSE পড়ে কী ধরনের চাকরি পাওয়া যায়?

CSE পড়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, মেশিন লার্নিং, AI বিশেষজ্ঞ, সাইবার সিকিউরিটি, ওয়েব ডেভেলপার, অ্যাপ ডেভেলপার, ডেটা সায়েন্টিস্ট, প্রোডাক্ট ম্যানেজার ইত্যাদি আরো অনেক ধরনের চাকরি করা যায়।

CSE-এর প্রধান বিষয়বস্তু গুলো কি কি?

CSE-এর প্রধান বিষয় হলো প্রোগ্রামিং ভাষা। যেকোন একটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ যেমন; (C, C++, Java, Python, JavaScript, C# ইত্যাদি মতো যেকোন একটি ভাষায় দক্ষ হওয়া CSE-এর প্রধান কাজ। এরপর, ডেটা স্ট্রাকচার, অ্যালগরিদম, অপারেটিং সিস্টেম, ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এবং মেশিন লার্নিং সম্পর্কে ভালোভাবে জানা।

CSE-এর জন্য কী কী দক্ষতা থাকা প্রয়োজন?

CSE-এর জন্য প্রোগ্রামিং দক্ষতা, গাণিতিক দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, দ্রুত শেখার দক্ষতা এবং ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকা অনেক প্রয়োজন।

CSE পড়তে হলে কোন কোন বিষয়গুলো আগে জানা প্রয়োজন?

CSE পড়তে হলে আগে ইংরেজি ও গণিত মোটামুটি জানতে হবে। এরপর, বেসিক কম্পিউটার সম্পর্কে জানতে হবে। তারপর, ধীরে ধীরে বাকি গুলো শিখতে হবে।

কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার প্রধান সুবিধা কী?

বিশ্বের সর্বোচ্চ বেতনের চাকরি করতে চাইলে CSE নিয়ে পড়া বুদ্ধিমানের কাজ। যেমন; আপনার যদি গুগলে চাকরি করার ইচ্ছা থাকে বা গুগলের মতো বড় বড় কোম্পানিগুলোতে চাকরি করার ইচ্ছা থাকে তাহলে কম্পিউটার সায়েন্স আপনার জন্য।

কম্পিউটার সাইন্স কি সহজ সাবজেক্ট?

না, কম্পিউটার সাইন্স বা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার সাবজেক্ট অনেক কঠিন। কম্পিউটার সায়েন্সে সবসময় পড়াশোনা করতে হয়, প্রবলেম সলভ করতে হয়, টিম ম্যানেজ করতে হয়, অনেক ধৈর্যের প্রয়োজন, প্রতিনিয়ত সমস্যা হবে তাই সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা থাকতে হয় যা অনেক বেশি কঠিন।

CSE পড়তে কত টাকা লাগে?

CSE পড়তে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা সর্বোচ্চ ১২ লাখের বেশি। আপনি যদি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে CSE নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পান তাহলে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে ৪ বছরের কোর্স সম্পূর্ন করতে পারবেন।

Computer Science নিয়ে পড়লে কি হওয়া যায়?

কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে পড়লে আপনি সফটওয়্যার ডেভেলপার, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, দক্ষ প্রোগ্রামার, ডেটা সাইন্টিস্ট, প্রজেক্ট ম্যানেজার, প্রোডাক্ট ম্যানেজার, গেম ডেভেলপার, নেটওয়ার্কিং ইঞ্জিনিয়ার, সিস্টেম ডিজাইনার, ইত্যাদি।

কম্পিউটার সাইন্স পড়ে কোথায় চাকরি পাওয়া যায়?

সিএসই বা কম্পিউটার সাইন্স ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পর আপনি দেশের সেরা সফটওয়্যার কোম্পানি গুলোতে চাকরি করতে পারবেন। এছাড়া দেশের বাইরে ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট, আমাজন, নেটফ্লিক্স ইত্যাদি বড় বড় টেক কোম্পানিতে চাকরি করার সুযোগ পাবেন।

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার কি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ভালো?

বর্তমানে সিএসই এর ভবিষ্যৎ ভালো এবং ভবিষ্যতে আরও বেশি ভালো হবে বলে আমরা আশা করি। তবে, দিন দিন এর প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে।

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বেতন কত?

বাংলাদেশে একজন দক্ষ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এর বেতন ২৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বা তারও বেশি। দেশের বাইরে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের বেতন ৪ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। বিশেষ করে গুগলে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের বেতন বছরে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

মানুষ কেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে পড়াশোনা করে?

তিন ধরনের মানুষ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে পড়াশোনা করে। এক ধরনের মানুষ হলো যারা প্রযুক্তিকে ভালোবাসে, আরেক ধরনের মানুষ হলো যারা টাকা কে ভালোবাসে অর্থাৎ এই পেশাতে কেউ ভালো করতে পারলে সে অনেক বেশি টাকা ইনকাম করতে পারে এবং শেষ এক ধরনের মানুষ হলো যারা অন্যের কথায় উঠে বসে অর্থাৎ আমার বন্ধু কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে পড়াশোনা করে তাই আমিও পড়ি।

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে কতটুকু অভিজ্ঞতা লাগে?

আপনি হয়তো ৪ বছরের ডিগ্রি শেষ করে একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবেন। কিন্তু, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ভালো কিছু করতে চাইলে আপনাকে সারা জীবন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে এর কোন বিকল্প নেই। কারণ, টেকনোলজি প্রতিদিন আপডেট হয়।

কোন দেশে Computer Science নিয়ে পড়াশোনা করা উচিত?

United States, United Kingdom, Canada, Germany, Australia, Denmark, Switzerland, Norway, China, Ireland, Singapore এই সকল দেশে কম্পিউটার বা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের চাহিদা অনেক বেশি। তাই এই দেশ গুলোতে কম্পিউটার সাইন্স ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে পড়াশোনা করা উচিত। তবে, ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য United States, United Kingdom, Canada, Australia, Germany এই দেশ গুলো উত্তম।

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে বাংলাদেশে পড়াশোনা করা উচিত নাকি বিদেশে পড়াশোনা করা উচিত?

অবশ্যই, বিদেশে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার পড়াশোনা করা উচিত। কারণ, বাংলাদেশে সফটওয়্যার কোম্পানি গুলো সবেমাত্র ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। এছাড়াও, বাংলাদেশে হাতে গনা যাবে এমন কয়েকটি কোম্পানি রয়েছে। কিন্তু বিদেশে সফটওয়্যার কোম্পানির প্রচুর চাহিদা। আপনি যদি আপনার মেধা কে আরো ডেভেলপ করতে চান এবং ভালো টাকা ইনকাম করতে চান তাহলে বিদেশে চলে যাওয়া উত্তম।

শেষ কথা

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা অনেকের থাকতে পারে, কিন্তু সত্যি কথা বলতে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং সহজ সাবজেক্ট না এটা অনেক বেশি কঠিন। আপনি শুনে দুঃখ পাবেন সবচেয়ে বেশি বেকার থাকে কম্পিউটার সায়েন্স এর ছাত্র ছাত্রীরা। এই পোস্টে যে ৮ টি দক্ষতার কথা বলা হয়েছে সেগুলো যদি একজন কম্পিউটার সায়েন্স এর ছাত্রের মধ্যে না থাকে তাহলে সে কখনো ভালো কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং হতে পারবে না। শেষে থাকে বিভিন্ন কোম্পানিতে ছোট খাটো প্রজেক্ট ম্যানেজার, প্রোডাক্ট ম্যানেজার, কল সেন্টার, মোবাইল দোকানে চাকরি করতে হয়।

আপনাকে বলব যদি আপনার ধৈর্য থাকে এবং একটানা কয়েক ঘন্টা কম্পিউটারে বসে প্রবলেম সলভ করার মতো ক্ষমতা থাকে, এক কথায় যদি আপনার প্রোগ্রামিং বা টেকনোলজি ভালো লাগে তাহলে কম্পিউটার সায়েন্স আপনার জন্য। এই সেক্টরে আপনাকে স্বাগতম, কিন্তু আপনার যদি এগুলোর প্রতি কোন ইন্টারেস্ট না থাকে তাহলে আপনাকে বলবো দয়া করে কম্পিউটার সায়েন্স পড়বেন না। ভবিষ্যতে অনেক কষ্ট পাবেন, শুধু তাই নয় প্রতিনিয়ত প্রোগ্রামিং এবং টেকনোলজি আপডেট হতে থাকে তাই আপনি যদি আপডেট বিষয় গুলো সাথে সাথে না শিখেন তাহলে ঠিকে থাকা অনেক কষ্ট। যাইহোক, কোন প্রশ্ন থাকলে আমাকে মেসেঞ্জারে বলতে পারেন।

Leave a Comment