বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বৃহত্তম ব্যাংক গুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক একটি, এটি হলো বাংলাদেশের একটি শরীয়াহ-ভিত্তিক ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংক শরীয়াহ-ভিত্তিক ব্যাংক হওয়ায় বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করে থাকে। এছাড়া ইসলামী ব্যাংক সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং অনেক বেশি পুরাতন একটি ব্যাংক।
অনেকের কাছে ইসলামী ব্যাংক একটি জনপ্রিয় এবং পছন্দের ব্যাংক। কিন্তু, অনেকেই জানে না ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে এবং ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে যার কারণে অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে যায়। যাইহোক, আজকের এই পোস্টের মধ্যে আমি আপনাকে জানানোর চেষ্টা করেছি ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম এবং ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে সেই সম্পর্কে। এছাড়াও, ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করা হয়েছে তাই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত দেখার অনুরোধ।
Table of Contents
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে
অ্যাকাউন্টের ধরন | প্রাথমিক জমা | চেকবুক | এটিএম কার্ড | মাসিক ফি |
কারেন্ট একাউন্ট | ৫০০ টাকা | ৫০ টাকা | ১০০ টাকা | ৫০ টাকা |
সেভিংস একাউন্ট | ১,০০০ টাকা | ৫০ টাকা | ১০০ টাকা | ২০ টাকা |
ইসলামী সেভিংস একাউন্ট | ১,০০০ টাকা | ৫০ টাকা | ১০০ টাকা | ২০ টাকা |
সুপার সেভিংস একাউন্ট | ১০,০০০ টাকা | ৫০ টাকা | ১০০ টাকা | ৫০ টাকা |
ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট | ৫০,০০০ টাকা | — | ১০০ টাকা | পরিবর্তনশীল |
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগবে সেটা অ্যাকাউন্টের ধরন এর উপর নির্ভর করে। যেমন: ইসলামী ব্যাংকের ইসলামী সেভিংস একাউন্ট খুলতে প্রাথমিকভাবে ১,০০০ টাকা জমা দিতে হবে। এভাবে, কারেন্ট একাউন্ট খুলতে প্রাথমিকভাবে ৫০০ টাকা জমা দিতে হবে। সুপার সেভিংস একাউন্ট খুলতে প্রাথমিকভাবে ১০,০০০ টাকা এবং ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট খুলতে প্রাথমিকভাবে ৫০,০০০ টাকা জমা দিতে হবে। তবে এগুলো ব্লক মানি হিসেবে থাকে। অর্থাৎ, একাউন্ট বন্ধ হওয়ার পর এই টাকা পাওয়া যাবে। এরপর, আপনি যদি চেকবুক নিতে চান তাহলে ৫০ টাকা লাগবে, এটিএম কার্ডের জন্য ১০০ টাকা লাগবে এবং মাসিক ফি একাউন্ট ধরনের উপর নির্ভর করে ২০ টাকা অথবা ৫০ টাকা হতে পারে। মনে রাখবেন ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট এর ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।
ভবিষ্যতে এই টাকার মান অবশ্যই পরিবর্তন হতে পারে, তাই বিভ্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে ইসলামী ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন https://islamibankbd.com/index.php অথবা 16259 এই নাম্বারে কল করে তাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আশা করি ইসলামী ব্যাংক থেকে আপনাকে সম্পূর্ণ বুঝিয়ে দেওয়া হবে। সর্বশেষ, নিজে বিভ্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচুন এবং অন্যকে বাঁচান।
ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে
ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার জন্য প্রাথমিকভাবে ১,০০০ টাকা জমা দিতে হবে এবং সুপার সেভিংস একাউন্ট খোলার জন্য ১০,০০০ টাকা জমা দিতে হবে। ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট মাসিক ফি ২০ টাকা এবং সুপার সেভিংস একাউন্ট মাসিক ফি ৫০ টাকা। এটিএম কার্ড এর জন্য ১০০ টাকা এবং চেক বুকের জন্য ৫০ টাকা লাগবে।
অ্যাকাউন্টের ধরন | প্রাথমিক জমা | চেকবুক | এটিএম কার্ড | মাসিক ফি |
সেভিংস একাউন্ট | ১,০০০ টাকা | ৫০ টাকা | ১০০ টাকা | ২০ টাকা |
ইসলামী সেভিংস একাউন্ট | ১,০০০ টাকা | ৫০ টাকা | ১০০ টাকা | ২০ টাকা |
সুপার সেভিংস একাউন্ট | ১০,০০০ টাকা | ৫০ টাকা | ১০০ টাকা | ৫০ টাকা |
ইসলামী ব্যাংক কারেন্ট একাউন্ট চার্জ
ইসলামী ব্যাংক কারেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য প্রাথমিকভাবে ৫০০ টাকা জমা দিতে হবে, যা একাউন্ট ক্লোজ হওয়ার পর পাওয়া যাবে। কারেন্ট একাউন্ট চেক বুকের জন্য ৫০ টাকা ও এটিএম কার্ডের জন্য ১০০ টাকা লাগবে। ইসলামী ব্যাংক কারেন্ট একাউন্ট মাসিক ফি ৫০ টাকা।
অ্যাকাউন্টের ধরন | প্রাথমিক জমা | চেকবুক | এটিএম কার্ড | মাসিক ফি |
কারেন্ট একাউন্ট | ৫০০ টাকা | ৫০ টাকা | ১০০ টাকা | ৫০ টাকা |
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র, ২ কপি পাসপোর্ট আকারের ছবি, ঠিকানা প্রমাণের কাগজপত্র (বিদ্যুৎ বিল/গ্যাস বিল ইত্যাদি), আয়ের উৎস সনদ বা প্রমাণপত্র, নমিনির ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগে। অন্যান্য কাগজপত্রের মধ্যে আপনার ক্ষেত্রে কি কি প্রয়োজন হবে সেটা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলে দিবে।
এক নজরে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে যে সকল কাগজপত্র লাগে:
- আবেদন ফরম: একটি নতুন একাউন্ট খোলার জন্য অবশ্যই একটি আবেদন ফরম প্রয়োজন হবে। আবেদন ফরম ইসলামী ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে অথবা সরাসরি নিকটস্থ ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করা যাবে। আবেদন ফরম টি সংগ্রহ করে এরপর প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সেটা পূরণ করতে হবে।
- আবেদনকারী ভোটার আইডি কার্ড / জাতীয় পরিচয় পত্র কপি
- পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি
- ঠিকানা প্রমাণের জন্য বিদ্যুৎ বিল / গ্যাস বিল ইত্যাদি বিলের কপি
- আয়ের উৎস হিসেবে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
- নমিনির পাসপোর্ট সাইজের এক ছবি এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
- অন্যান্য কাগজপত্র (আবেদনকারী ব্যক্তিগত কার্যক্রমের উপর নির্ভর করে)
উপরের এই কয়েকটি কাগজপত্র দিয়ে আপনি খুব সহজে একটি নতুন ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারবেন। আপনি নিশ্চয় জানেন ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের ধরন বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তাই আপনি যে ধরনের একাউন্ট করবেন তার উপর নির্ভর করে আপনাকে প্রাথমিক জমা ফি দিতে হবে। আশা করি আপনি জানেন কোন অ্যাকাউন্টের প্রাথমিক জমা ফি কত টাকা?
আরো জানুন: জনতা ব্যাংক কি সরকারি
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
ইসলামী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম বা ধাপ সমূহ:
- প্রথমে আপনি আপনার নিকটস্থ যেকোনো একটি ইসলামী ব্যাংকের শাখায় যান।
- ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থেকে একটি আবেদন ফরম সংগ্রহ করুন।
- আবেদন ফরম সঠিকভাবে পূরণ করুন।
- আবেদন ফরমে যে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো জমা দিন।
- ন্যূনতম আমানত পরিশোধ করুন।
এভাবে আপনাকে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হবে। আপনি চাইলে এটিএম কার্ড অথবা চেক বুকের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এটা আপনার উপর নির্ভর।
আরো জানুন: ইসলামী ব্যাংক থেকে টাকা তোলার নিয়ম
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট সুবিধা
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট সুবিধা গুলো হলো:
- খুব বিশ্বাসযোগ্য একটি ব্যাংক
- দেশে এবং দেশের বাইরে প্রচুর জনপ্রিয়তা লাভ করেছে
- শরিয়াহ-ভিত্তিক লেনদেন
- প্রতিযোগিতামূলক সুদের হার
- অফলাইন এবং অনলাইন লেনদেন সুবিধা
- মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা
- দেশব্যাপী প্রচুর শাখা
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট কত প্রকার?
ব্যাংক একাউন্ট খুলতে চাইলে, প্রথমে বিভিন্ন ধরনের একাউন্ট সম্পর্কে কিছু জানা জরুরি। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংকে কয়েকটি প্রধান একাউন্টের প্রকারভেদ রয়েছে, যা আপনার প্রয়োজনের ওপর নির্ভর করে বেছে নিতে পারবেন। এখানে তাদের সম্পর্কে কিছু সংক্ষিপ্ত ধারণা দেওয়া হলো।
- আল-ওয়াদিয়াহ কারেন্ট একাউন্ট: এটি ব্যবসায়ী কিংবা যারা নিয়মিত লেনদেন করেন, তাদের জন্য খুবই উপযোগী। এই একাউন্টে আপনি দৈনিক কতবার ইচ্ছা টাকা জমা এবং উত্তোলন করতে পারেন। তবে ব্যাংক প্রতিমাসে আপনার লেনদেনের পরিমাণ অনুযায়ী কিছু চার্জ নেবে। চেক বই, ডেবিট কার্ড ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধাও পাবেন। একাউন্ট খুলতে হলে ন্যূনতম ১০০০ টাকা জমা দিতে হবে।
- আল-ওয়াদিয়াহ পারসোনাল রিটেইল একাউন্ট: যারা ছোটখাটো ব্যবসা করেন, তাদের জন্য এই একাউন্টটি আদর্শ। ট্রেড লাইসেন্সের প্রয়োজন নেই, তাই শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে সহজেই একাউন্ট খুলতে পারবেন। এই একাউন্টে QR Code ও POS Machine ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে।
- মুদারাবা সেভিংস একাউন্ট: চাকরিজীবী কিংবা শিক্ষার্থীদের জন্য এটি বেশ উপযোগী। এখানে জমাকৃত টাকার বিপরীতে স্বল্প হারে মুনাফা দেওয়া হয়। চেক বই, ডেবিট কার্ড এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা এখানে থাকছে।
- মুদারাবা স্পেশাল সেভিংস একাউন্ট: অনেকেই একে পেনশন একাউন্ট বলেও জানেন। এখানে প্রতি মাসে ১০০ থেকে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত জমা রাখতে পারবেন, তবে ৩ থেকে ১০ বছরের মেয়াদে। এই একাউন্টের সাথে চেক বই বা ডেবিট কার্ড দেওয়া হয় না, এবং মেয়াদ পূর্তির আগে টাকা উঠাতে চাইলে মুনাফা পাবেন না।
- স্টুডেন্ট মুদারাবা সেভিংস একাউন্ট: এটি ১৮ বছরের নিচে শিক্ষার্থীদের জন্য। ১৮+ হলে নিজে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে একাউন্ট খুলতে পারবেন, আর ১৮ বছরের নিচে হলে অভিভাবকের পরিচয়পত্র দিয়ে যৌথভাবে খুলতে হবে। এই একাউন্টে ফ্রিতে লেনদেন করা যায় এবং একটি ডেবিট কার্ডও পাওয়া যায়। একাউন্ট খুলতে ন্যূনতম ১০০ টাকা জমা দিতে হয়।
এছাড়া কিছু অন্যান্য মুদারাবা সেভিংস একাউন্টও আছে, কিন্তু সেগুলো তেমন জনপ্রিয় নয়, তাই সেগুলো এখানে উল্লেখ করা হলো না। আশা করি, এই তথ্যগুলো আপনার ব্যাংক একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে!
FAQ
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট কত প্রকার?
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট ৬ প্রকার। যেমন: কারেন্ট একাউন্ট, সেভিংস একাউন্ট, ইসলামী সেভিংস একাউন্ট, ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট, সুপার সেভিংস একাউন্ট এবং স্টুডেন্ট একাউন্ট। আপনি চাইলে এই ৬ ধরনের একাউন্ট এর মধ্যে যেকোনো এক ধরনের একাউন্ট তৈরি করতে পারেন।
ইসলামী ব্যাংক একাউন্টে টাকা রাখা কি নিরাপদ?
হ্যাঁ, ইসলামী ব্যাংক একটি বিশ্বস্ত ব্যাংক। তাই আপনি চাইলে নিঃসন্দেহে ইসলামী ব্যাংকে টাকা রাখতে পারেন। এছাড়া, ইসলামী ব্যাংক হলো একটি শরীয়াহ-ভিত্তিক ব্যাংক। বিভিন্ন মেডিকেল, কোম্পানি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা প্রদান করে থাকে।
ইসলামী ব্যাংকে সর্বনিম্ন কত টাকা রাখা যায়?
ইসলামী ব্যাংকে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা রাখা যায়, যদি আপনি স্টুডেন্ট একাউন্ট তৈরি করেন সেক্ষেত্রে আপনি ইসলামী ব্যাংকে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা রাখতে পারবেন। তবে, কারেন্ট একাউন্ট এর ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা এবং সেভিংস একাউন্ট এর ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১০০০ টাকা রাখতে হবে। এছাড়া সুপার সেভিংস একাউন্ট এর ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১০,০০০ টাকা এবং ফিক্স ডিপোজিট একাউন্ট এর ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৫০,০০০ টাকা রাখতে হবে।
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার কত ডিজিট হয়ে থাকে?
সাধারণত, ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট নম্বর ১৭ ডিজিট হয়ে থাকে।
শেষ কথা
আমি আশা করি আপনি এখন জানেন ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে সে সম্পর্কে। খেয়াল রাখবেন এই পোস্টে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে সেটি বলা হয়েছে তবে এই টাকার মান ভবিষ্যতে পরিবর্তন হতে পারে। তাই আপনি সরাসরি ইসলামী ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে সঠিক তথ্য জেনে নিবেন অথবা আমাদের মেসেঞ্জারে বলতে পারেন।