ই পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার নিয়ম – নিশ্চিতভাবেই, অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন করার পর যদি আপনি দেখতে পান যে আবেদনপত্রে কিছু ভুল হয়েছে, তাহলে সংশোধনের প্রক্রিয়া একটু জটিল হতে পারে। আপনি নিজের পক্ষ থেকে আবেদন সংশোধন করতে পারবেন না। এজন্য আবেদন বাতিল করে নতুন করে আবেদন করতে হয়।
অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন জমা দেওয়ার পর যদি কোন ভুল হয়ে যায়, তাহলে কী করবেন, অনেকেই সেটা জানেন না। ই-পাসপোর্ট আবেদন জমা দেওয়ার পর আপনি সরাসরি সংশোধন করতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে আপনাকে আবেদন বাতিল করে নতুন করে আবেদন করতে হবে।
আজকের এই পোস্টে আমরা আলোচনা করব কিভাবে ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিলের ফরম পূরণ করবেন এবং আবেদন বাতিলের জন্য কিভাবে দরখাস্ত করবেন।
Table of Contents
ই পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার নিয়ম
অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন করার পর যদি দেখতে পান যে আপনার আবেদনপত্রে কোনো ভুল হয়েছে অথবা পাসপোর্টের কপি জমা দেওয়ার পর অফিস থেকে যদি কোনো ভুল দেখানো হয় এবং আবেদনপত্র ফিরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আপনাকে আবেদন বাতিল করার জন্য একটি আবেদন জমা দিতে হবে।
অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন করার পর যদি কোনো ভুল দেখা যায়, তাহলে পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করা সম্ভব নয়। এর পরিবর্তে, আপনাকে আবেদন সংশোধন করতে হবে।
তবে, যদি আপনি আবেদন বাতিল করতে চান, এটি করার জন্য একটি চিঠি লিখে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালকের কাছে জমা দিতে হবে।
অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন করার পর আবেদনপত্রের কপি পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হয়। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই কপি জমা না দেওয়া হয়, তবে আপনার আবেদন ৬ মাসের মধ্যে বাতিল হয়ে যাবে।
তবে, যদি আবেদনের মধ্যে কোনো ভুল দেখা যায় এবং আপনি আবেদন বাতিল করতে চান, তখন আপনাকে ৬ মাস অপেক্ষা করতে হবে না। আপনার আবেদন বাতিল করার জন্য আপনাকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
যদি আপনার ই-পাসপোর্ট আবেদনে কোনো ভুল থাকে এবং আপনি আবেদন বাতিল করতে চান, তাহলে আপনাকে পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালকের কাছে একটি দরখাস্ত লিখতে হবে। এই দরখাস্ত জমা দিয়ে আপনি এক দিন থেকে কয়েক দিনের মধ্যে আবেদন বাতিল করতে পারবেন।
অনেক সময় দেখা যায়, পাসপোর্ট অফিসে কিছু দালাল আবেদন বাতিল করার জন্য ৫০০-১০০০ টাকা দাবি করতে পারে। কিন্তু, এই ধরনের অতিরিক্ত টাকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আবেদন বাতিল করার জন্য কেবলমাত্র পাসপোর্ট অফিসের সহকারী উপ-পরিচালকের কাছে একটি দরখাস্ত লিখলেই হবে।
ই পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার দরখাস্ত লেখার পদ্ধতি
বিষয়: ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিলের জন্য দরখাস্ত
আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, [আপনার জেলার নাম]
তারিখ: [তারিখ]
বরাবর,
সহকারী উপ-পরিচালক,
আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস,
[আপনার জেলার নাম]
বিষয়: ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিলের দরখাস্ত
মহোদয়/মহোদয়া,
আমি, [আপনার নাম], পিতার নাম [আপনার পিতার নাম], জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর [আপনার এনআইডি নম্বর], [আপনার ঠিকানা], ই-পাসপোর্ট আবেদন নম্বর [আপনার আবেদন নম্বর] এর জন্য আবেদন করেছি।
আমার আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর কিছু ভুল দেখা দিয়েছে এবং সংশোধনের সুযোগ না পাওয়ায় আমি আবেদন বাতিলের জন্য অনুরোধ করছি। আবেদন বাতিল করার জন্য আমি প্রয়োজনীয় আবেদনপত্রের কপি সংযুক্ত করছি।
আবেদন বাতিলের জন্য দালালদের বাড়তি টাকা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনার অফিসের মাধ্যমে আমি শুধুমাত্র দরখাস্ত লিখে এবং আবেদনপত্রের কপি সংযুক্ত করে আবেদনটি বাতিল করতে চাই।
আপনার সদয় সহায়তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ থাকব।
ধন্যবাদসহ,
[আপনার নাম]
যোগাযোগ নম্বর: [আপনার ফোন নম্বর]
ইমেইল: [আপনার ইমেইল ঠিকানা]
ডকুমেন্টস সংযুক্ত করুন:
- আবেদনপত্রের কপি (যেটি অনলাইনে জমা দিয়েছিলেন)
- জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি (যদি প্রয়োজন হয়)
- অন্য কোনো প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
- দরখাস্ত জমা দিন: পূর্ণাঙ্গ দরখাস্ত এবং সংযুক্ত ডকুমেন্টস সহ পাসপোর্ট অফিসে জমা দিন।
এভাবে, আপনি কোন অতিরিক্ত ফি বা দালালের সাহায্য ছাড়াই সহজে আপনার আবেদন বাতিল করতে পারবেন। যদি কোনো সমস্যা বা প্রশ্ন থাকে, পাসপোর্ট অফিসের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করুন।
পুনরায় ই পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম
ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার পর আপনার ই-মেইলে একটি মেসেজ আসবে যা জানাবে যে আপনার আবেদন বাতিল করা হয়েছে। এরপর, আপনার প্রোফাইল থেকে নতুনভাবে আবেদন করতে পারবেন।
যদি আপনার প্রোফাইল থেকে পুনরায় আবেদন করা সম্ভব না হয়, তাহলে নতুন একটি ইমেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার করে নতুন প্রোফাইল তৈরি করে আবেদন করতে পারেন।
পাসপোর্ট আবেদন পূরণের সময় সাবমিট করার আগে সব তথ্য বারবার চেক করে দেখুন। নিশ্চিত করুন যে আপনার সব তথ্য সঠিক এবং কোনো ভুল নেই। কারণ, সাবমিট করার পর আপনি আর কোনো সংশোধন করতে পারবেন না।
তাই আবেদন করার আগে, আপনার সব তথ্য পুনরায় যাচাই করুন এবং ভুল থাকলে সংশোধন করুন। একবার সাবমিট হয়ে গেলে, আর কোনো পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। এই কারণে সাবমিট করার পূর্বে নিশ্চিত করুন যে আপনার আবেদনপত্র সম্পূর্ণ এবং সঠিক।
আরো পড়ুন: পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে মেডিকেল রিপোর্ট চেক
আবেদন বাতিল ফি প্রসঙ্গ
অনেকেই মনে করেন যে পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করলে তাদের জমা দেওয়া আবেদন ফি ফেরত পাবেন। কিন্তু আসলে, আবেদন ফি ফেরত পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে কিভাবে আপনি ফি পরিশোধ করেছেন তার ওপর।
যদি আপনি আবেদন করার সময় অনলাইনে আবেদন ফি পরিশোধ করে থাকেন, যেমন ekpay বা MFS (মোবাইল ব্যাংকিং) ব্যবহার করে, তাহলে মনে রাখতে হবে যে এই ফি সাধারণত অফেরতযোগ্য। অর্থাৎ, আবেদন বাতিল হলেও এই ফি ফেরত পাবেন না।
তবে, যদি আপনি অফলাইনে আবেদন ফি পরিশোধ করে থাকেন, যেমন ব্যাংক ড্রাফট বা চ্যালান ব্যবহার করে, তাহলে আপনার কোনো চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। এই ক্ষেত্রে, আপনাকে শুধু চালানের কপি নতুন আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করে জমা দিতে হবে। এতে করে আপনার আবেদন বাতিল হবে এবং ফি ফেরতের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
তাহলে, যদি আবেদন বাতিলের পরেও আপনার ফি ফেরত পেতে চান, নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনি কীভাবে ফি পরিশোধ করেছেন এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিন।
FAQ
ই পাসপোর্ট আবেদনে ভুল হলে করণীয় কী?
ই-পাসপোর্ট আবেদনে কোনো ভুল হলে প্রথমে আপনাকে একটি দরখাস্ত লিখে পাসপোর্ট অফিসে আবেদন সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। যদি সংশোধনের সুযোগ না থাকে বা কোনো কারণে সংশোধন করা সম্ভব না হয়, তাহলে আপনাকে আবেদন বাতিল করতে হবে এবং নতুন করে আবার আবেদন করতে হবে। এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, আপনি নিশ্চিত করতে পারেন যে আপনার আবেদন সঠিকভাবে প্রক্রিয়াকৃত হবে এবং কোনো ভুলের কারণে সমস্যা হবে না।
ই পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করলে পেমেন্ট বাতিল হবে?
যদি আপনি অনলাইনে পেমেন্ট করে থাকেন এবং আপনার আবেদন বাতিল হয়, তাহলে সেই পেমেন্ট বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু যদি আপনি চালান বা অফলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করে থাকেন, তাহলে সেই চালান ব্যবহার করে নতুন করে আবারও একই পাসপোর্টের আবেদন জমা দিতে পারবেন।
পাসপোর্ট আবেদনে কোন তথ্য ভুল হলে কি আবেদন বাতিল করতে হবে?
যদি আপনার পাসপোর্ট আবেদনে কোনো ভুল হয়ে যায়, প্রথমে তা পাসপোর্ট অফিসে জানান। অনেক ক্ষেত্রে, আপনি পাসপোর্ট অফিসে মৌখিকভাবে বা লিখিতভাবে আবেদন করে সংশোধন করে নিতে পারেন। যদি এমনভাবে সংশোধন করা সম্ভব না হয়, তখনই আপনাকে আবেদন বাতিল করে নতুনভাবে আবেদন করতে হবে। এভাবে, আপনি ভুল সংশোধনের চেষ্টা করে দেখতে পারেন এবং প্রয়োজন হলে আবেদন বাতিল করে পুনরায় আবেদন করতে পারেন।
আরো পড়ুন: E Passport Status Meaning
ই-পাসপোর্টের আবেদনে ভুল সংশোধন করার উপায়
ই-পাসপোর্ট আবেদনের জন্য প্রথমে আপনাকে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। এই অ্যাকাউন্টে আপনার সব তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। অনলাইন আবেদনটি চূড়ান্তভাবে সাবমিট করার আগে, আপনার যদি কোনো ভুল থাকে, তাহলে আপনি যেকোনো সময় সেটি সংশোধন করতে পারবেন।
তবে, একবার আবেদন সাবমিট হয়ে গেলে, ভুল সংশোধন করা সম্ভব হবে না। এই ক্ষেত্রে, আপনাকে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে।
যদি অনলাইনে আবেদন করার পর আপনার আবেদনপত্রে ভুল থাকে, তাহলে দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন:
- ছোট ভুলের ক্ষেত্রে: যদি ভুলগুলি ছোট আকারের হয়, তাহলে আপনি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে সেখানকার কম্পিউটার অপারেটরকে অনুরোধ করতে পারেন। সাধারণত, তারা সেগুলি সংশোধন করে দেবে।
- বড় ভুলের ক্ষেত্রে: যদি ভুলগুলো বড় হয় এবং সংশোধন সম্ভব না হয়, তাহলে আপনাকে আবেদন বাতিল করতে হবে এবং নতুন করে আবেদন করতে হবে।
আবেদন বাতিল করার প্রক্রিয়া:
যদি আপনি আপনার ই-পাসপোর্ট আবেদনটি বাতিল করতে চান, প্রথমে পাসপোর্ট অফিসের সহকারী উপ-পরিচালক বরাবর একটি দরখাস্ত দিতে হবে। এই দরখাস্তে আপনার নাম, মা-বাবার নাম, আবেদন করার তারিখ এবং অনলাইনে নিবন্ধিত আবেদনের আইডি নম্বর উল্লেখ করতে হবে। আইডি নম্বরটি আবেদনের পর অ্যাপ্লিকেশন সামারিতে পাওয়া যাবে, যা সাধারণত OID দিয়ে শুরু হয়।
দরখাস্তে অনলাইনের যে অংশে ভুল হয়েছে তা উল্লেখ করতে হবে এবং আবেদন সামারির প্রিন্ট করা কপি সংযুক্ত করতে হবে। এরপর দরখাস্ত জমা দিতে হবে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে।
দরখাস্ত জমা দেওয়ার পর, আপনার মোবাইল নম্বরে একটি এসএমএস আসবে যে আপনার আবেদন বাতিল হয়েছে। এসএমএস পাওয়ার পর, সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করুন। সেখানে আবেদন স্ট্যাটাস লাল অক্ষরে ‘ক্যানসেল’ দেখাবে এবং একটি ডিলিট অপশন থাকবে। ডিলিট অপশনে ক্লিক করার পর আপনার আবেদন বাতিল হয়ে যাবে। এরপর সঠিক তথ্য দিয়ে নতুন করে আবেদন করতে পারবেন।
প্রসেস সম্পন্ন হতে ২৪ ঘণ্টা থেকে ৭ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে, তাই ওয়েবসাইটের চেক স্ট্যাটাস মেন্যুতে গিয়ে নিয়মিত চেক করুন।
এছাড়া, মনে রাখতে হবে যে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন ফি জমা দিতে হবে ৬ মাসের মধ্যে। এই সময়ের মধ্যে ফি এবং আঙুলের ছাপ ও ছবি না দিলে আবেদন বাতিল হয়ে যাবে।
ফি পরিশোধের পর যদি আবেদনে ভুল ধরা পড়ে, তাহলে পুরানো নিয়মে দরখাস্ত করে আবেদন বাতিল করতে হবে। তবে, পুরানো ফি ফেরত পাওয়া যাবে না। নতুন আবেদনের সঙ্গে আগের জমা দেওয়া ফি’র ব্যাংক রশিদ বা চালান সংযুক্ত করতে পারবেন।
আশা করছি, আপনি এখন পাসপোর্ট আবেদন বাতিলের প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন। ই-সার্ভিস সংক্রান্ত আরও তথ্য জানতে আমাদের অন্যান্য পোস্টগুলোও পড়তে পারেন।